স্পোর্টস ডেস্ক: টিম বাংলাদেশের বিশ্বকাপ ব্যর্থতার কারণ অনুসন্ধানে গঠিত তিন সদস্যর বিশেষ কমিটি গতকাল রোববার থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরু করেছে। প্রথম দিন কমিটি নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নু, হাবিবুল বাশার সুমন এবং বিশ্বকাপ দলের ২ সদস্য লিটন দাস ও মোস্তাফিজুর রহমানের সাথে কথাও বলেছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সে খবরটি রীতিমত চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। মিডিয়ার একাংশেও সে খবর বেশ ঢালাওভাবে প্রচারিত হয়েছে।
সাবেক ক্রিকেটার ও বর্তমান বোর্ডের তিন পরিচালকের সমন্বয়ে গড়া ওই কমিটিকে বলা হচ্ছে ‘তদন্ত’ কমিটি। সত্যিই কি এটা তদন্ত কমিটি? তা নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন। কারণ খোদ কমিটির সদস্যরাই এটাকে তদন্ত কমিটি মানতে নারাজ। বিসিবি থেকে তদন্ত কমিটির কথা বলা হয়নি।
বিসিবির প্রেস রিলিজকে মানদন্ড ধরলে এটাকে তদন্ত কমিটি বলা যায় না। সেখানে বলা হয়েছে ‘স্পেশাল কমিটি’ এবং গত ২৯ নভেম্বর দুপুরে বিসিবি থেকে দেয়া ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বিশ্বকাপে আন্ডার পারফরমেন্স (প্রত্যাশিত পারফরমেন্স ও ফল না হওয়ায়) তিন জনের গড়া এক বিশেষ কমিটি। যাদের কাজ হবে বিশ্বকাপে টিম বাংলাদেশের প্রত্যাশিত পারফরমেন্স না হওয়ার কারণ অনুসন্ধান ও একটি পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন পেশ।
কমিটির অন্যতম সদস্য মাহবুব আনাম জাগো নিউজকে বলেন, প্রথমতঃ অবস্থানগত কারণে আমি ও এ বিশেষ কমিটির কারোরই মিডিয়ায় কথা বলা নিষেধ। তবে তিনি আকার ইঙ্গিতে যা বোঝানোর চেষ্টা করেছেন, তার সারমর্ম হলো, এই স্পেশাল কমিটি নিয়ে এরই মধ্যে একটি ভুল বোঝাবুঝির উদ্রেক ঘটেছে। কারণ এটাকে তদন্ত কমিটি বলা হচ্ছে। আসলে এটা বিশ্বকাপে জাতীয় দলের আন্ডার পারফরমেন্স হওয়ার কারণ অনুসন্ধানে গড়া এক স্পেশাল কমিটি।
‘আমাদের ওপর দায়িত্ব দেয়া হয়েছে বিশ্বকাপে প্রত্যাশিত ফল না হওয়ার কারণ খুঁজে বের করে প্রতিবেদন তৈরি করতে। আমি এর বেশি একটি কথাও বলতে পারবো না।’ মাহবুব আনাম অন রেকর্ড শুধু এটুকু বলে মুঠোফোন আলাপ শেষ করেন।
এদিকে সচেতন মহলের ধারণা, বিসিবি বিশেষ কমিটি নামে অভিহিত করলেও এটা আসলে তদন্ত কমিটিই। কারণ বোর্ড থেকে বলাই হয়েছে বিশ্বকাপে প্রত্যাশিত পারফরমেন্স না হওয়ার কারণ অনুসন্ধানে গঠিত বিশেষ কমিটি। কাজেই তাদের কাজটাতো তদন্তই হবে।
তবে ওই বিশেষ কমিটির কার্যক্রমের শুরুতে কিছু প্রশ্নর জন্ম দিয়েছে। বিসিবির ভাষায় বিশ্বকাপে ‘আন্ডার পারফরমেন্স’ মানে প্রত্যাশিত পারফরমেন্স ও ফল না হওয়ার যথাযথ কারণ অনুসন্ধানে গঠিত ‘স্পেশাল কমিটি’ গঠনের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা এসেছে গত ২৯ নভেম্বর দুপুরে। আর বিসিবির তিন পরিচালক এনায়েত হোসেন সিরাজ, মাহবুবুল আনাম ও আকরাম খানের সমন্বয়ে গড়া ওই বিশেষ কমিটি কাজ শুরু করলো ৪ দিন পর, গতকাল ৩ ডিসেম্বর তাও ঢাকঢোল পিটিয়ে।’
বলে রাখা ভাল, জাতীয় দলের ব্যর্থতায় বিসিবির কারণ অনুসন্ধান কমিটি গঠন নতুন নয়। আগেও হয়েছে। ২০০৩ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় আইসিসির ২ সহযোগি সদস্য কেনিয়া-কানাডাসহ সব ম্যাচ হারার পরও নৌবাহিনীর কমোডর মুজিবুর রহমানকে চেয়ারম্যান করে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল।
এছাড়া ২০২১ সালে টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ব্যর্থতার পরও এই এনায়েত হোসেন সিরাজকে চেয়ারম্যান করে ৩ সদস্যর তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। সেই ২ তদন্ত কমিটি কাজ করেছে নিরবে নিভৃতে। কবে , কখন কার সাথে কথা হয়েছে , তা জানাও ছিল কঠিন। কিন্তু এবারের তদন্ত কাজ শুরুই হলো মিডিয়ার সামনে।
এছাড়া এবারের তদন্ত কমিটির কারন অনুসন্ধান ও প্রতিবেদন বোর্ডে জমা দেবার কোন আনুষ্ঠানিক সময় সীমাও বেঁধে দেয়া হয়নি। তাই তারা কত দিনের মধ্যে নিজেদের ফাইন্ডিংস বোর্ডে জমা দেবেন, তা জানারও কোন সুযোগ নেই। তবে অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে তদন্ত কমিটির কাজ ২০২৩ সালে শেষ করা কঠিন।
কারণ, ভিনদেশি কোচিং স্টাফ ও বিশ্বকাপ স্কোয়াডের সব ক্রিকেটারের সাথে কথা বলতে বেশ সময় লাগবে তদন্ত কমিটির। ওই দলের যারা এখন নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট দলে আছেন তাদের সাথে এখন সিরিজ চলাকালীন তো প্রশ্নই আসে না টেস্ট সিরিজ শেষেও কথা বলা কঠিন হবে।
কারন ১০ ডিসেম্বর ( ৬ ডিসেম্বর শুরু হয়ে দ্বিতীয় টেস্ট ) টেস্ট সিরিজ শেষ হওয়ার পর পরই নিউজিল্যান্ডে পাড়ি জমাবে ওয়ানডে আর টি টোয়েন্টি দল। ধরেই নেয়া যায় , ডিসেম্বরের শেষ ভাগে নিউউজিল্যান্ড থেকে ফেরার পর পরই হয়ত তদন্ত কমিটি সব ক্রিকেটারের সঙ্গে কথা বলা শেষ করতে পারবে। কাজেই এ মাসে কোনভাবেই তদন্ত শেষ হবেনা। হয়ত আগামী বছর জানুয়ারীতে পূর্নাঙ্গ প্রতিবেদন বোর্ডে জমা পড়বে।